খেজুরের উপকারিতা কি? ঘুমানোর আগে খেজুর খেলে কি হয়
খেজুরের উপকারিতা কি?
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম এবং খুব অল্প পরিমাণ সোডিয়াম। এই পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম মানব দেহে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। খেজুরকে চিনির বিকল্প হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। ১০০ গ্রাম খেজুর এ কত ক্যালরি? চারটি খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। একটি খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদা প্রায় ১১ ভাগ পূরন করে।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম?
একজন ব্যক্তির খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন চারটি করে খেজুর রাখা উচিত। খেজুর যখন তখন খাওয়া যায় তবে রাত্রে এবং সকালবেলা খেজুর খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। খেজুর সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। সকালে খেজুর খেলে সারাদিন শরীরে শক্তি পাওয়া যায় এবং অফিসের কাজে সহজে ক্লান্তি আসে না পাশাপাশি পেট থেকে দূষিত পদার্থও বেরিয়ে যায়। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পরিষ্কার করতে, হৃদয় ও লিভার সুস্থ রাখতে সকালে খেজুর খাওয়া উচিত।
কিসমিস ও খেজুর একসঙ্গে খেলে কি হয়?
প্রতিদিন কিসমিস খেলে অল্প বয়সে অস্টিওপরোসিস বা অন্য কোনো হাড়ের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শরীরে রক্তের অ্যাসিটিডির মাত্রা কমাতে কিসমিসের বিকল্প কিছু নেই এবং প্রতিদিন সকালে ২-৩ টি খেজুর কাজে যাওয়ার আগে খেয়ে গেলে সারাদিন শরীরে সহজে ক্লান্তি আসে না। কারন খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট এবং আরও নানা উপকারি উপাদান যা মানব দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই আমরা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেজুর এবং কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
📢 Read More: কালোজিরার উপকারিতা? টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
এছাড়াও প্রতিদিন খেজুর এবং কিসমিস একসঙ্গে খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিসমিস ভেজা পানি খেলে কিডনির নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই আমরা প্রতিদিন কিসমিস ও খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি।
সুক্কারি খেজুর খাওয়ার উপকারিতা?
সুক্কারি খেজুর সৌদি আরবে প্রতিটি অঞ্চলে চাষ করা হয়। আরবিতে সুক্কারি অর্থ হলো মিষ্টি। চিনির চাইতেও মিষ্টি হওয়ায় আরবরা এর নাম দিয়েছে সুক্কারি। এ খেজুরের গুনগত মান অনেক বেশি খেতেও অনেক বেশি সুস্বাদু। এই খেজুর সংরক্ষণে কোনো প্রকার ক্যামিকেল ব্যাবহার করা হয় না তাই খেজুরের গুনগত মান ঠিক থাকে। তাই এর উপকারিতাও অনেক বেশি পাওয়া যায়।
কোন খেজুরের উপকারিতা বেশি?
অনেকের মনে প্রশ্ন কত রকমের খেজুর আছে? খেজুরের উপকারিতা এতো বেশি যে গুনাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। খেজুর খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।স্বাদের দিক দিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের খেজুর দেখতে পাই। গবেষকদের মতে শুকনো বিভিন্ন খেজুরের মধ্যে মরিয়ম খেজুর সবচেয়ে বেশি উপকারি এবং পুষ্টি সম্পন্ন। বিশেষ করে রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর মরিয়ম খেজুরের পুষ্টি গুণ শরীরে ব্যাপক উপকারে আসে। মরিয়ম খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার যা মানব শরীরে জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা?
খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ভালো কলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। পুরুষদের অত্যাধিক কলেস্টেরলের কারনে হার্টের সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ২-৩ টি খেজুর খেয়ে ঘুমানো উচিত এবং দুধের সাথে ২-৩ টি ভিজিয়ে খেলে পুষ্টি উপাদান আরো বেশি পাওয়া যায়।
খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়?
অনেকেই মনে প্রশ্ন থাকে রোজ কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত? খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ফাইবার, খনিজ এবং ভিটামিন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ২-৩ টি খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে দুটি খেজুর খেলে অনেক উপকার বেশি পাওয়া যায়। গবেষকদের মতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাজে যাওয়ার আগে ২-৩ টি খেজুর খেলে গেলে সারাদিনের শক্তি পাওয়া যায়। তাই খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকল বেলা খালি পেটে। তাই আমরা প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি এতে আমাদের শরীরের সারাদিন শক্তি পাওয়া যাবে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা?
গর্ভাবস্থায় নারীদের চলাফেরায় খাওয়া-দাওয়া সবকিছুই নিয়ম মেনে করতে হয় একটু সচেতন হলেই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। গর্ভকালীন সময়ে নারীদেরকে সুষম খাবার খেতে হয়। সেক্ষেত্রে খেজুর আপনার পুষ্টি চাহিদার সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুক্টোজ থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা পরিবর্তন না করে শরীরে দ্রুত শক্তি সঞ্চালন করে। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া ভালো কারণ খেজুরে রয়েছে ল্যাক্সেটিভ যা জরায়ুর সংগঠনের সহায়তা করে এবং প্রসব বেদনা কমায়। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম হলো প্রতিদিন রাতে অথবা সকালে ২-৩ টি করে খেজুর খাওয়া।
📢 Read More: আসল মধু চেনার উপায়? খাঁটি মধু কোথায় পাওয়া যাবে?
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা?
অতিরিক্ত খেজুর খেলে কি হয়? খেজুর খেতে ছোট বড় কে না ভালোবাসে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের নিয়ম মেনে খেজুর খাবেন। হজমের সমস্যা থাকলে ভারি খাবার খাওয়ার পরেই খেজুর খাবেন না। যাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি তারা অল্প পরিমাণে খেজুর খাবেন। এছাড়াও যাদের পাতলা পায়খানার সমস্যা আছে তারা খেজুর থেকে দূরে থাকুন। দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত? দিনে দুই থেকে তিনটা খেজুর খেলেই যথেষ্ট।
খেজুরের নাম সমূহ? খেজুর কত প্রকার ও কি কি?
আজওয়াঃ সৌদি আরবের সবথেকে উন্নত মানের খেজুর। আজওয়া খেজুর দেখতে কালো এবং বিচি ছোট খেতেও দারুন সুস্বাদু।
সাফাওয়িঃ এই খেজুর লম্বা গারো বাদামী রঙের মতো হয় এবং খেতেও অনেক মিষ্টি।
আমবারঃ মদিনার সব থেকে জনপ্রিয় খেজুর এটি। এই খেজুর মিষ্টি একটু কম, তবে স্বাদে অতুলনীয়।
সুগায়িঃ এই খেজুর ছোট ও বড় দুই সাইজের হয়। মুখে দিলে একটু কস লাগে খেতে অসম্ভব মিষ্টি এবং বাইরের আবরণ নরম হয়ে থাকে।
মরিয়মঃ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় খেজুর হলো মরিয়ম। লাল রঙের এই খেজুর লম্বা কালো এবং খেতে দারুন সুস্বাদু।
ডায়াবেটিস হলে খেজুর খাওয়া যাবে কি?
বর্তমানে কম বেশি সকলেই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিসের রোগীদেরকে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করা হয় তাই বলে কি সব ধরনের মিষ্টি খাবার খেতে নিষেধ করা হয়? খেজুরের রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, খনিজ এবং ভিটামিন যার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আর এ অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবারের বিকল্প হতে পারে খেজুর। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা খুব স্বাচ্ছন্দেই খেজুর খেতে পারেন তবে অল্প পরিমাণে খাবেন এতে কোন সমস্যা নেই।
ভালো খেজুর চেনার উপায়?
১) ভালো খেজুরের চামড়া একটু কুচকানো থাকে তবে শক্ত হয় না নরম ও হয় না। ভালো খেজুরের উপরে চামড়া উজ্জ্বল ও চকচকে হয়।
২) বিশ্বের সব দেশেই ভাল খেজুর চাষ হয় না। সব থেকে ভালো খেজুর উৎপাদন হয় মিশরে এরপরে ইরান ও সৌদি আরব। তাই খেজুর কেনার আগে জেনে নিন খেজুরটি কোন দেশের কিনছেন।
৩) খেজুরের বিভিন্ন ভাগ রয়েছে এরমধ্যে আজওয়া, আনবারা, সাগি বা সুগায়ি, সাফাওয়ি, মুসকানি, মরিয়ম খেজুর মিষ্টি এবং অত্যন্ত সুস্বাদ। এছাড়াও খালাস, ওয়াসালি, বেরহি, শালাবি, ডেইরি, মাবরুম, ওয়ান্নাহ, সেফরি, সুক্কারি, খুদরি ইত্যাদি খেজুর রয়েছে। তবে আমাদের বাংলাদেশে আজওয়া এবং মরিয়ম খেজুর অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৪) ভালো খেজুর কেনার আরেকটি উপায় হলো যদি দেখেন খেজুরের মধ্যে পিঁপড়া এবং মাছি ভনভন করে তাহলে সে খেজুরটি ভালো নয়। কারণ ভালো খেজুরে কখনো মাছি পিঁপড়া বসে না। খেজুরে চিনি জাতীয় পদার্থ মেশানোর কারণে পিঁপড়াও মাছি বসে।
📢 Read More: তুলসি পাতার উপকারিতা - তুলসি পাতা মুখে দিলে কি হয়?
৫) খেজুর মুখে নিয়ে খাওয়ার সময় মিষ্টির পরিমাণ কম বেশি মনে হলে বুঝতে হবে সেখানে কিছু ভেজাল মেশানো আছে।
৬) বাজার থেকে সবসময় প্যাকিং করা খেজুর কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণে সেখানে উৎপাদন তারিখসহ সবকিছু দেওয়া থাকে। এছাড়াও খেজুর কোনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে গন্ধযুক্ত খেজুর পোকা ধরা এবং বেশি কালচে ভাব এবং শুকিয়ে যাওয়া খেজুর কেনা যাবে না।
কোন খেজুরের দাম কত? ১ কেজি খেজুরের দাম কত?
- আজওয়া প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৬৯০ টাকা।
- আলজেরিয়ান প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৪০০ টাকা।
- মেডজুল প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ১১০০ টাকা।
- মাবরুম প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৮০০ টাকা।
- ডাব্বাস প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ২৫০ টাকা।
- মরিয়ম প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৬৫০ টাকা।
- সাফাওয়ি প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৫০০ টাকা।
- আম্বর প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৬০০ টাকা।
- খোরমা প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ১৬০ টাকা।
- সুক্কারি প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৫৫০ টাকা।
- আজওয়া প্রতি কেজি খেজুরের মূল্যঃ ৬৯০ টাকা।
কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো?
সারা বিশ্বের বিভিন্ন জাতের খেজুর রয়েছে তবে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবথেকে জনপ্রিয় খেজুরের জাত হলো আজওয়া এবং মরিয়ম খেজুর। এছাড়াও সবচেয়ে পুষ্টিকর খেজুর হলো আজওয়া এবং মরিয়ম।