আসল মধু চেনার উপায়? খাঁটি মধু কোথায় পাওয়া যাবে?

khati modhu chenar upay


আজকে আপনাদেরকে দেখাবো আসল মধু চেনার উপায় কি? মধুতে প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাজারে এত মধুর সমাহারে কোনটি আসল আর কোনটি নকল মধু সেটা বোঝা দায়। তাই আজকে আপনাদেরকে দেখাবো কিভাবে খুব সহজেই কোনটি আসল আর কোনটি নকল মধু কিভাবে বুঝবেন?

খাঁটি মধু চেনার উপায় কি? khati modhu chenar upay?

মধুতে রয়েছে অনেক ঔষধি গুন। ত্বকের যত্নে ও ঠান্ডা জনিত সমস্যা সাড়াতে মধু খুব ভালো কাজ করে। তাই আমাদের প্রতিদিন সকালে এক চামচ করে খাঁটি মধু খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাজারে ভেজাল মধুর ছড়াছড়িতে আসল মধু খুঁজেই পাওয়া যায় না। তো খাঁটি মধু চেনার উপায় কি?

১) খাঁটি মধু চেনার উপায় হলো খাঁটি মধুতে সাদা ফেনা বা বুদবুদের মতো দেখা যায়। কিন্তু ভেজাল মধুতে বুদবুদ এর মত দেখা যায় না।

২) খাটে মধু ফ্রিজে রাখলে কখনো জমাট বাঁধবে না বা দানা দানা ভাব হবে না। তবে ভেজাল মধু ফ্রিজে রাখলে জমাট বাঁধবে এবং চিনির মতো দানা ভাব দেখা দেবে।

৩) খাঁটি মধুতে ম্যাচের কাঠি ডুবিয়ে আগুন ধরালে জ্বলে উঠবে। যদি না জলে তবে বুঝতে হবে ভেজাল মধু।

৪) ভিনেগারের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খুব সহজে মধু আসল নাকি নকল সেটি বোঝা যায়। এজন্য একটি পাত্রে ভিনেগার গোলানো পানিতে কয়েক ফোঁটা মধু দিতে হবে। পানি মিশ্রনের সময় যদি ফেনা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে সেটি আসল মধু নয়। আর যদি ফেনা দেখা না দেয় তাহলে বুঝতে হবে সেটা আসল মধু।

কোন কোম্পানির মধু ভালোঃ kon company modhu valo?

মধুতে প্রায় ৪৬টিরও বেশি খাদ্য উৎপাদন রয়েছে।তবে এতে সাধারণ কোনো চর্বি বা প্রোটিন নেই। তাই মধু শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকারি একটি উপদান। আমাদের দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো ব্র্যান্ডের মধু হলো HP মধু। এই সুনামধন্য কোম্পানি গত বছর জাপানে তিন চালানে মোট ৭৫টন মধু রপ্তানি করেছে। 

সরিষা ফুলের মধু চেনার উপায় কিঃ

সরিষা ফুলের মধু ঘন হোক বা পাতলা হোক এটি সারা বছরই জমে থাকে। সরিষা ফুলের মধুর ঘ্রান অনেকটা সরিষা ফুলের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সরিষা ফুলের মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে। সরিষা ফুলের মধু জমে যায় যা দেখতে ক্রিম এর মতো হয়ে থাকে। আসল সরিষা ফুলের মধু দেখতে অনেকটা উজ্জ্বল হয় তবে কিছুদিন থাকলে সেটি জমে সাদা রঙ্গের মত হয়।

সরিষা ফুলের মধু জমে যায় কেন?

আসল মধুর বৈশিষ্ট্য কি? অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন সরিষার মধু কি জমে যায়? সরিষা ফুলের মধুর মধ্যে গ্লুকোজ মিশ্রিত থাকে। আর আমরা জানি গ্লুকোজ কিন্তু ঠান্ডায় জমে যায়। আর যেহেতু সরিষা ফুলের মধ্যে গ্লুকোজ থাকে আর সেই গ্লুকোজ মিশ্রিত ফুল থেকে মধু তৈরি হয় যার কারণে ঠান্ডা আবহাওয়াতে সরিষা ফুলের মধু জমে যায়।

খলিশা ফুলের মধু চেনার উপায়?

সাধারণত খলিশা গাছের ফুল থেকে এই মধু সংগ্রহ করা হয় যা অনেক সুস্বাদু এবং দেখতেও অনেকটা সুন্দর। খলিশা সাধারণত ম্যানগ্রোভ বনভূমির উদ্ভিদ তাই সুন্দরবনের মত বন ছাড়া এই মধু পাওয়া যায় না।


বাজারে যে হারে ভেজাল মধু বিক্রি হচ্ছে তাতে আপনি আসল খলিসা মধু খুঁজেই পাবেন না। তবে আপনার কাছে যদি PH মাপার মেশিন থাকে তাহলে খুব সহজে আসল খলিসা মধু পেতে পারেন। কারণ আসল খলিসা মধুর গড় PH মান 3.9 ৷ তবে অনেক সময় এর মান 3.8 থেকে 6.1 পর্যন্ত হতে পারে৷ যদি এই pH মানের কম বেশি হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে এই মধুর মধ্যে কোন ভেজাল মেশানো আছে। এছাড়াও এই মধুর মধ্যে সব সময় পাতলা এবং ফ্যানা হয়। পাত্রে রাখলে গ্যাসের মতো তৈরি হয় এবং ঝাঁকি দিলে ফেনা উঠে। খলিসা ফুলের মধু জমে গেলে ঘি এর মত বর্ণ ধারণ করে আর মুখে নিলে সাথে সাথে গলে যায় এবং গ্লুকোজের মত স্বাদ লাগে।

মধু খাওয়ার উপকারিতাঃ

মধু মানব শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যা দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। যেমন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হজম শক্তি বৃদ্ধি, ওজন কমানো, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে খাঁটি মধু। মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়াওঃ...
  • গোপন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • তারুণ্য বজায় রাখে।
  • রক্তশূন্যতায় কমাতে সাহায্য করে।
  • হজমে সহায়তা করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • তুলসী পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা সর্দি কাশি কমে যায়।
  • মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মধু খাওয়ার নিয়মঃ

মধু খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকল বেলা খালি পেটে। মধু কখনো গরম বা রান্না করে খাওয়া যাবে না এতে মধুর গুনগতমান নষ্ট হয়ে যায়। মধু গরম দুধ দিয়েও খাওয়া যাবে না। দুধ দিয়ে খেতে হলে দুধ আগে ঠান্ডা করে তারপর মধু মিশিয়ে খাওয়া যাবে। হজমের সমস্যা দূর করতে প্রতিবার ভারি খাবারের আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিলে হজমের সমস্যা দূর হয়ে যায়। লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে যায়। যৌন দুর্বলতা কাটাতে প্রতিদিন সকালে কাঁচা ছোলার সাথে মধু খেলে দারুন উপকারিতা পাওয়া যায়।

খাঁটি মধু কোথায় পাওয়া যায়ঃ

যারা প্রতিনিয়ত মধু খেতে ভালোবাসেন তাদের সব থেকে বড় দুধ চিন্তা হলো খাঁটি মধু কিভাবে কোথায় পাবেন? বর্তমানে ভেজাল মধুর ছড়াছড়িতে আসল মধু খুঁজে পাওয়া বড় দায়। খাঁটি মধু বা ভেজাল মধু চেনার সব চেয়ে ভালো উপায় হলো ল্যাব টেস্ট। কিন্তু মধু টেস্ট করার জন্য ল্যাব পাবেন কোথায়। এজন্য আপনাকে উপরের নিয়ম গুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই আসল মধু চিনে নিতে পারেন। আর পিওর মধু পেতে চাইলে সরাসরি গাছ থেকে মধু সংগ্রহ করতে হবে।

 
কিন্তু যারা অনলাইনে মধু কিনেন তারা কিভাবে খাঁটি মধু পাবেন এজন্য আপনারা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অথবা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে যাচাই করে আসল মধু সংগ্রহ করে নিতে পারেন। আসল মধু পাওয়ার কিছু উৎস হলোঃ

মধু কত দিন পর্যন্ত ভালো থাকে?

মধু একটি প্রাকৃতিক খাবার মধু কখনো নষ্ট হয় না। তবে ৫ থেকে ৬ মাসের বেশি থাকলে মধুর রং এবং সাধের একটু পরিবর্তন আসতে পারে। তবে মধু নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হলো আসল মধুতে যদি ভেজাল মধু মিশ্রিত থাকে সেক্ষেত্রে মধু নষ্ট হয়ে যায়।

ভেজাল মধু কীভাবে তৈরী করা হয়?

আমাদের আশেপাশে অনেক অসাধু মধু বিক্রেতা রয়েছে যারা ভেজাল মধু তৈরি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকে। তবে আজকে আমরা জানব ভেজাল মধু কিভাবে তৈরি করা হয়।
  1. প্রথমে, পাত্রে ২ কাপ পানি নিয়ে গরম করে নিন।
  2. এবার ২ কাপ চিনি ঢেলে দিন।
  3. এবার ২ টুকরো লেবুর রস চেপে দিন।
  4. ২/৩ কাপ খাঁটি মধু ঢেলে দিন।
  5. ২৫-৩০ মিনিট চুলায় তাপ দিয়ে দুই কাপ চিনি ও দুই কাপ পানি ঢেলে দিন।
এভাবেই কিছুক্ষণ চুলায় তাপ দেওয়ার পরে ভেজাল মধু তৈরি হয়ে যাবে।

সতর্কীকরণঃ এটা শুধুমাত্র মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে। কেউ মানুষকে ঠকানোর জন্য ব্যবহার করবেন না এর জন্য আপনি দুনিয়াতে এবং আখিরাতে দায়ী থাকবেন।

সুন্দরবনের মধু চেনার উপায়ঃ

সুন্দরবনের মধু দেখতে অনেকটা লাইট রংয়ের হয়ে থাকে তবে ফুলের ভিন্নতার কারণে মধুর রং পরিবর্তন হতে পারে।
  • খেতে অনেক সুস্বাদু হালকা টক এবং মিষ্টি হয়।
  • সুন্দরবনের মধুর স্বাধ আখের রসের মত হতে পারে।
  • সুন্দরবনের মধু অনেকটা পাতলা হয়।
  • সুন্দরবনের মধু কখনোই জমে না।
  • সুন্দরবনের মধু একটু ঝাঁকি দিলে বুদবুদ এর মত ফেনা বের হয়। যা আসল মধু চেনার অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায়।

আসল মধু কি জমে? 

খাঁটি মধু কি জমে? আমরা অনেকেই মনে করি, মধু জমে গেলে সেই মধুতে ভেজাল মিশানো আছে তা কিন্তু একেবারেই নয়। কারণ অনেক সময় ঠান্ডা আবহাওয়াতে থাকলে মধু জমে যেতে পারে এর কারণ হচ্ছে মধুতে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ থাকা। আমরা কমবেশি সকলেই জানি গ্লুকোজ কিন্তু ঠান্ডাতে জমে।

মধু জমে গেলে করনীয়?

মধু জমে গেলে একটি পাত্রে কিছু পানি গরম করে নিয়ে মধুর বোতলটি সেই পাত্রে কিছুক্ষণ রেখে দিলে মধুটি জমাট বাধা থেকে তরলে পরিণত হবে। এ ছাড়াও ঠান্ডা দিনে মধু জমে গেলে কিছুক্ষণ রোদে রাখলে মধু পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়।

খাঁটি মধুর দাম?

যে সকল মৌয়ালরা সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ করে বিক্রি করে তাদের মধুর মূল্য টাকা দিয়ে কখনোই পরিশোধ করা যাবে না। কারণ ভয়ংকর সুন্দরবনের মধু আবরণ করতে গিয়ে অনেকে বাঘের হাতে শিকার হয়ে থাকেন। মধু আহরণ করতে গিয়ে সুন্দরবনে অনেক মৌয়ালকে বাঘে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

◾প্রাকৃতিক চাকের মধুঃ Natural Forest Honey Price:

  • ২৫০ গ্রাম মধু মাএ ২৭০ টাকা।
  • ৫০০ গ্রাম মধু মাএ ৫০০ টাকা।
  • ১ কেজি মধু মাএ ৯৮০ টাকা।

◾লিচু ফুলের মধুঃ Litchi Flower Honey Price:

  • ২৫০ গ্রাম মধু মাএ ১৯৫ টাকা।
  • ৫০০ গ্রাম মধু মাএ ৩৫০ টাকা।
  • ১ কেজি মধু মাএ ৬৯০ টাকা।

◾সরিষা ফুলের মধুঃ Mustard Flower Honey Price:

  • ২৫০ গ্রাম মধু মাএ ১৪৫ টাকা।
  • ৫০০ গ্রাম মধু মাএ ২৫০ টাকা।
  • ১ কেজি মধু মাএ ৪৯০ টাকা।

◾সুন্দরবনের ফুলের মধুঃ Sundarbans Natural Honey:

  • ২৫০ গ্রাম মধু মাএ ২৭০ টাকা।
  • ৫০০ গ্রাম মধু মাএ ৫০০ টাকা।
  • ১ কেজি মধু মাএ ৯৮০ টাকা।

◾কালোজিরা ফুলের মধুঃ Black Seed Flower Honey Price:

  • ২৫০ গ্রাম মধু মাএ ৩২০ টাকা।
  • ৫০০ গ্রাম মধু মাএ ৬০০ টাকা।
  • ১ কেজি মধু মাএ ১১৮০ টাকা‌।

মধু সংরক্ষণের উপায়?

মধু অনেক দিন সংরক্ষণ করার কার্যকরী উপায় হলো কাঁচের বোতলে মধু রাখা। কাঁচের বোতলে মধু রাখলে মধু অনেকদিন ভালো থাকে। তবে কখনোই প্লাস্টিকের পাত্রে মধু রাখবেন না। কাঁচের পাত্রে মধু রেখে এমন স্থানে রাখুন যেখানে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। মধু কখনোই জালানার পাশে রাখবে না যেখানে রোদ আসে। এছাড়াও চুলার পাশে রাখবে না যাতে মধু গরমে নষ্ট হয়ে যায়।

মধু নষ্ট হলে বোঝার উপায়?

মধু নষ্ট হয়ে গেলে পাতলা পানির মত হয়ে যায়। এছাড়াও নষ্ট মধু অনেকটা ফ্যাকাশে হয় এবং হালকা দুর্গন্ধ হতে পারে। 

আশা করি বুঝতে পেরেছেন বাজারে কিভাবে খুব সহজে খাঁটি মধু চিনবেন। তবে সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি মৌচাক থেকে মধু নামার পর কিনে নেন। তবে কখনোই ফেসবুক পেজের বিজ্ঞাপন দেখে মধু কিনবে না। আর কিনলেও সেটি ভালো করে যাচাই করে তারপর নিবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url