তুলসি পাতার উপকারিতা - তুলসি পাতা মুখে দিলে কি হয়
তুলসি পাতার উপকারিতা?
তুলসী পাতার হাজারো উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্য থেকে কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব আজ। তুলসী পাতা সেবনে জ্বর, কাশি, সর্দি থেকে নিরাময় হওয়া সম্ভব। মানসিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর, চোখের সমস্যা দূর, বদহজম, খাবারের অরুচি, মুখের দুর্গন্ধ, শরীরের ব্যথা নিরাময়, বুকে কফ থেকে মুক্তি, ক্ষতস্থান সরাতে, ফুসফুস, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস সারাতে, রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ক্যান্সার প্রতিরোধক, শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পেটের যাবতীয় সমস্যা দূরীকরণ, হার্টের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তুলসি পাতা খাওয়ার উপকারিতা
১) সর্দি-কাশির মহা ঔষধঃ সর্দি-কাশি সারাতে তুলসী পাতার রস ভীষণ উপকারী। সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতা বেটে এর রস প্রতিদিন সকালে খেলে খুব শীঘ্রই সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তুলসী পাতার রস তেতোর জন্য খেতে না পারলে এর সাথে চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।
২) ওজন কমায়ঃ তুলসী পাতার রস সেবনে রক্তের শুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল দুটোই নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। যার কারণে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। তাই প্রায় প্রতিদিন সকালবেলা তুলসী পাতার রস সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরল এবং সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে। ফলে আপনার ওজন বাড়বে না। বাজারে তুলসী পাতার তৈরি বিভিন্ন ট্যাবলেট এবং ওষুধ পাওয়া যায়।
৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন রোগ সারাতে তুলসী পাতার বিকল্প নেই। ফুসফুস, এজমা, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত তুলসী পাতার রস সেবন করতে হবে। বিভিন্ন ক্ষত সারাতে তুলসী পাতার রস বেটে দিলে খুব দ্রুত ক্ষত সেরে যায়। তুলসি পাতার রস ও এলাচের মিশ্রণে গরম পানি ফুটিয়ে হালকা কুসুম করে গোসল করলে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪) ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ তুলসী পাতা এমন একটি মহা ঔষধ যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ক্যান্সার হয় টিউমারের মাধ্যমে এবং এই টিউমার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে। তুলসী পাতার রস সেবন করলে এসব অনিয়ন্ত্রিত কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। যার ফলে ক্যান্সার থেকে নিরাপদ থাকা যায়। অগ্নাশয় ক্যান্সার, বেস্ট ক্যান্সার থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
৫) গলা ব্যথা দূর করেঃ গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতার রসের প্রশংসা হয়না। এই গলা ব্যথা দূর করার মহা-ঔষধ হচ্ছে তুলসী পাতা। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা কয়েকটি তুলসী পাতা নিয়ে গরম পানিতে ফুটিয়ে লবণ দিয়ে গরগর করলে গলা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৬) নিম্ন রক্তচাপঃ তুলসী পাতার রস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে তুলসী পাতার রস সেবন করতে পারেন কিন্তু কারো যদি নিম্ন রক্তচাপ থাকে সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতার সহিত তুলসী পাতার রস সেবন করতে হবে। তাদের জন্য তুলসী পাতার রস সেবন জরুরি নয় তবে অন্যান্য সব রোগের জন্য হলেও তুলসী পাতার রস সেবন করতে পারেন তবে নিয়ম মেনে।
৭) রক্তপাতের সমস্যাঃ যে কোন সার্জারি করতে গেলে তার প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই তুলসী পাতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কেননা তুলসী পাতার রস অতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি বৃদ্ধি পায়। যার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এর ফলে রক্ত জমাট বাধায় সমস্যাও সৃষ্টি হয়।
তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম
এতক্ষণ আমরা জানলাম তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে এখন জানব তুলসী পাতা ব্যবহারের নিয়ম। আপনি চাইলে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন, আদা- এলাচ অথবা মধু মিশিয়ে তুলসী পাতার রস খেতে পারেন, গরম ফুটানো পানিতে তুলসী পাতা ছেড়ে দিয়ে পরবর্তীতে সেই কুসুম পানি খেতে পারেন এবং শরীর ধুয়ে নিতে পারেন, তুলসী পাতা চায়ের লিকারে দিয়ে চা খেতে পারেন, ফুটন্ত গরম পানিতে তুলসী পাতা ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে ভাব নিয়ে মুখে লাগালে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, কাঁচা হলুদ তুলসী পাতার রস দিয়ে পেস্ট করাতে পারেন, বেসন ও তুলসী পাতার রস মিশ্রিত করে ফেসপ্যাক বানাতে পারেন, হাত পায়ের কালো দাগ দূর করতে এই পাতার রস কাঁচা হলুদ এবং দুধ মিশ্রণ করে হাতে পায়ে লাগাতে পারেন। সৌন্দর্য চর্চায় তুলসী পাতার ব্যবহার চলে আসছে বহুকাল থেকে।
তুলসী পাতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম
এমনিতেই তুলসী পাতা এবং মধুতে রয়েছে দারুন সব গুনাগুন। এটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মধু এবং তুলসির পাতা মিশ্রণ করে একসঙ্গে খেলে সর্দি ও কাশি দ্রুত সেরে যায়। এছাড়াও যুগ যুগ ধরে নানা চিকিৎসায় মধু এবং তুলসী পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
- কাশি কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়।
- অকালবার্ধক্য কমায়।
- কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা করে।
- হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে।
- ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে।
তুলসি পাতার চা এর উপকারিতা
আমরা কমবেশি সকলে আদা এবং লেবু দিয়ে চা খেয়ে থাকি। তবে বর্তমানে দিন দিন তুলসী পাতার চায়ের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে কমবেশি সবারেই সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। তাই সর্দি-কাশির থেকে পরিত্রাণ পেতে তুলসী পাতার চা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, স্তন ক্যান্সার, শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা, মাইন্ড রিফ্রেশ এবং ভালো ঘুম পেতে তুলসী পাতার চা পান করতে পারেন।
তুলসি পাতার রুপচর্চা
রূপচর্চায় তুলসী পাতা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মুখের ব্রণ এবং কালো দাগ সারাতে তুলসী পাতার জুড়ি নেই।
তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক
তুলসী পাতার বহু উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও তুলসী পাতার অপকারিতা ও রয়েছে তুলসী পাতার ব্যবহার অতিরিক্ত হলে এর কিছু প্রভাব পড়ে আমাদের উপর। তুলসী পাতার রস অধিক গ্রহণের ফলে রক্ত জমাট বাঁধায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। রক্ত জমাট বাধা বন্ধ হতে পারে। নারীদের অতিরিক্ত তুলসী পাতার রস গ্রহণে বন্ধ্যাত্ব হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতার রস গ্রহণ করলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই আমাদের সচেতন হয়ে তুলসী পাতার ব্যবহার নিয়ম অনুযায়ী করতে হবে।